চাটগাঁইয়া ওয়েবডেক্স: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থলে এনসিপি ও নাগরিক কমিটির দু'পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন (এনসিপি) নেতা নাজমুস সাকিব তামিম (৩৮) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল (৩৬)।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে এই সংঘর্ষ ঘটে। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত তামিমকে তাৎক্ষণিকভাবে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং শরীরের ঘাড়, হাত, পিঠে মারাত্মক জকম হয়ে শাকিলকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।
বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাফিদুল ইসলাম বলেন, “মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে তামিমকে সকালেই হাসপাতালে আনা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে।”
আহত সাকিব অভিযোগ করেন, ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি ‘হা হা’ রিয়েক্ট দেওয়ার পর, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাকিল তার জন্ম নিয়ে কটূক্তি করেন। তিনি আরও বলেন, শাকিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা দাবী করে কালুরঘাট ব্রীজ টোল, ফুলতলা মাছ বাজার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বাচানোর নাম করে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে বর্তমান ওসি গোলাম সরোয়ার সাথে ভাগবাটোয়ারা করত। এদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে আমি দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। আজকে ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থলে আমাকে প্রকাশ্য মারার পর শাকিলকে আটক না করে তাকে নিরাপত্তা দিয়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেয় ওসি।
অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল বলেন, “আমার ছোট বোন জান্নাতুল রেখা ঝর্ণাকে নিয়ে আমরা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিই। সেখানেই নাগরিক কমিটির সাকিব ও তার আপন ছোট ভাইয়ের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার ওপর হামলা চালায় এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে মারধর করে। এতে আমার ছোট বোনও আহত হয়। ওরা কোন সাহসে আমাকে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের এর সামনে হামলা করে?
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেদকে জানান, বিগত কয়েক মাস যাবত নেতৃত্ব নিয়ে সাকিব ও শাকিলের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থলেই তাদের মধ্যে মারামারিটি সংঘটিত হয়।
তারা আরও জানান, বর্ষবরণের প্রস্তুতি দেখার জন্য ওসি সাহেব শাকিলকে সাথে নিয়ে আগেরদিন রাতেই অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি দেখে সাকিব প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সর্তক করেন যদি সকালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শাকিলকে উপস্থিত দেখেন তাহলে অনুষ্ঠানে গন্ডগোল হবে। তাই তো হয়েছে,পুলিশের উচিত ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। এখন সবাই ওসি সাহেবের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী জানান, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে ইউএনও, ওসিসহ অনেক নিরাপত্তা কর্মীদের সামনে কিছু উশৃংখল যুবকের মারামারিতে অনুষ্ঠানে আগত কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। আমিসহ কয়েকজন সাংবাদিক মিলে পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হই। থানার ওসির ভুমিকা আমাকে রহস্য জনক মনে হয়েছে, কেননা মারামারির মাঝখানে গিয়ে ওনি শুধু বলতে থাকে শান্ত হও শান্ত হও। তাকে আরও কঠোর হওয়া দরকার ছিল।
অনেক চেষ্টা করেও বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
এ ঘটনায় বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। আহত ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।